কক্সবাজারে এক সপ্তাহে ৭৪২ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ

আব্দুল কুদ্দুস, কক্সবাজার


বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলে গত সাত দিনে জেলেদের জালে অন্তত ৭৪২ মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়েছে। তবে এরপরও স্থানীয় বাজারে রয়েছে ইলিশের সংকট, যার কারণে বেশি দামে ইলিশ কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

মৎস্য বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, গত সাত দিনে কক্সবাজার উপকূল থেকে ৩ হাজার ৭১১ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ আহরণ করা হয়। এর মধ্যে ইলিশ ৭৪২ মেট্রিক টন। চলতি বছর ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন।

কক্সবাজারে পাইকারি ইলিশ বেচাবিক্রির সর্ববৃহৎ বাজার হচ্ছে শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা ফিশারীঘাটের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়—অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের সঙ্গে বেচাবিক্রি হচ্ছে ইলিশও। গভীর সাগর থেকে ইলিশ ধরে ফিশারীঘাটে ভিড়তে দেখা যায় ১০-১৫টি ট্রলারকে।

একটি ট্রলারের জেলে আমির হামজা (৫৫) বলেন, উপকূল থেকে ৬০-৭০ কিলোমিটার গভীর সাগরে পৌঁছে জাল ফেললে সামুদ্রিক মাছের সঙ্গে কিছু ইলিশ ধরা পড়ে। বর্তমানে ধরা পড়া বেশির ভাগ ইলিশের ওজন এক কেজির বেশি। কিছু স্থানে ৫০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশও ধরা পড়ছে। তবে সব ট্রলারের জেলেরা ইলিশের নাগাল পাচ্ছেন না। এ কারণে ইলিশের দাম বেশি।

তিনি জানান, তাঁদের ট্রলারের ৭০০ ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা টাকায়।

আরেকটি ট্রলারের জেলে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সাত দিন সাগরে অবস্থান করে তাঁরা ৪৫০টি ইলিশ পেয়েছেন, যা বিক্রি হয়েছে ৪ লাখ ১৩ হাজার টাকায়।’ নবী হোসেন নামে আরেক জেলে বলেন, তাঁদের ট্রলারে কোনো ইলিশই ধরা পড়েনি। তবে তাঁরা মাইট্যা, গুইজ্যা, লইট্যা, ফাইস্যাসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ পেয়েছেন। এসব বিক্রি করে তিন লাখ টাকা পেয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলা ১২টা পর্যন্ত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে প্রায় ১০ মেট্রিক টন ইলিশ কিনে ঢাকায় সরবরাহের ব্যবস্থা করেছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। প্রতি কার্টুনে ২০ কেজি করে ইলিশ ঢুকিয়ে ট্রাকে বোঝায় করতে দেখা যায় তাঁদের।

ব্যবসায়ীদের সংগঠন কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির প্রধান উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন বলেন, গতকাল তাঁরা ৭ মেট্রিক টন ইলিশ ঢাকায় পাঠিয়েছেন। আজ দুপুর পর্যন্ত পাঠিয়েছেন ১০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ ইলিশের ওজন এক কেজির বেশি করে।

ফিশারীঘাটের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে পাইকারিতে এক কেজি থেকে দুই কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৯০০ থেকে ১১০০ টাকা এবং ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজি ৭০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়। শহরের বিভিন্ন হাটবাজারে ইলিশ বিক্রি হতে দেখা যায় ফিশারীঘাটের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের তুলনায় কেজিতে ২০০-৫০০ টাকা বেশি দামে।

জানতে চাইলে শহরের বাহারছড়া বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আবদুল গফুর বলেন, চাহিদা অনুযায়ী তাঁরা ইলিশ পাচ্ছেন না। যে পরিমাণ ইলিশ বাজারে আসছে বেশি দামে তাঁদের কিনতে হচ্ছে। বেশির ভাগ ইলিশ ব্যবসায়ীরা সমুদ্রেই বেচাবিক্রি করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ৮-১০ দিন আগেও কমবেশি সব ট্রলারে ইলিশ ধরা পড়েছে। এখন ৭০ শতাংশ ট্রলারে ইলিশ ধরা পড়ছে না। তাতে জেলেরা হতাশ। ভারতে তিন হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির খবরে কক্সবাজারের জেলেরা খুশি হলেও পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়ায় জেলেপল্লিতে হতাশা বিরাজ করছে।

কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, কক্সবাজারে সাগরে ইলিশ ধরার ছোট-বড় ছয় হাজার ট্রলার রয়েছে। বৈরী পরিবেশের কারণে এখন অধিকাংশ ট্রলার ইলিশ ছাড়াই ঘাটে ফিরে আসছে। তাতে বাজারে মাছের সংকট রয়েছে।

খুচরা বাজারে ইলিশের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, আগে চোরাই পথে ইলিশ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে যেত, এখন ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে। তাতে ট্রলার মালিক ও জেলেরা ইলিশের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। এর প্রভাবে খুচরা বাজারে ইলিশের দাম চড়া।

মো. বদরুজ্জামান আরও বলেন, বৈরী পরিবেশে সাগর উত্তাল, নিম্নচাপ-লঘুচাপ সৃষ্টি, অতি বৃষ্টি, অতি গরমসহ প্রাকৃতিক নানা কারণে সাগরে কিছুদিন ধরে ইলিশ কম ধরা পড়ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ইলিশ আহরণ বাড়বে। বর্তমানে কক্সবাজার উপকূলে সামুদ্রিক মাছ আহরণের ট্রলার রয়েছে ৫ হাজার ৫০০টির বেশি।